সিনিয়র শিক্ষক, উত্তরা হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজ উত্তরা, ঢাকা
স্বাস্থ্যবিধি
প্রশ্ন : পানিবাহিত এবং বায়ুবাহিত রোগের সাদৃশ্য এবং বৈসাদৃশ্য কোথায়?
উত্তর : সাদৃশ্য : পানিবাহিত এবং বায়ুবাহিত রোগ- উভয়েই হলো সংক্রামক বা ছোঁয়াচে রোগ। এসব রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির দেহ থেকে বায়ু বা পানির মাধ্যমে খুব দ্রুত একজনের দেহ থেকে অন্যজনের দেহে ছড়িয়ে পড়ে। এটাই উভয় রোগের সাদৃশ্য।
বৈসাদৃশ্য : পানিবাহিত ও বায়ুবাহিত উভয়ে সংক্রামক হলে এদের মধ্যে বৈসাদৃশ্য রয়েছে। যেমন-
* পানিবাহিত সংক্রমিত হয় পানির মাধ্যমে। দূষিত পানি পান করলে, দূষিত পানি দিয়ে হাত বা থালা-বাসন ধুলে দূষিত পানির মাধ্যমে এ রোগের জীবাণু ছড়িয়ে পড়ে।
* আবার বিভিন্ন খাবার যেমন- রাস্তার খোলা খাবার, আমড়া, শসা, ফুচকা ইত্যাদির সঙ্গে দূষিত পানির খুব নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। সবার অজান্তে এসব খাবারের মধ্য দিয়েও পানিবাহিত রোগ বিস্তার লাভ করে।
অপরদিকে, বায়ুবাহিত রোগের বিস্তার ঘটে দূষিত বায়ুর মাধ্যমে।
* বিভিন্ন প্রাণঘাতী বায়ুবাহিত রোগের জীবাণু যেমন- যক্ষা, হাম, বসন্ত, বাতাসের মাধ্যমে একজনের দেহ থেকে খুব দ্রুত অন্যজনের দেহে ছড়িয়ে পড়ে।
* আবার বায়ু দূষণের ফলে হাঁচি-কাশি, হাঁপানি, ইনফ্লুয়েঞ্জাসহ বায়ুবাহিত নানা সাধারণ রোগে মানুষ আক্রান্ত হয়।
* দূষিত বায়ুর জন্য মানুষের শ্বাসকষ্টও বাড়ছে। চীনের বেইজিং শহরের অধিবাসী পাহাড়ি এলাকা থেকে বিশুদ্ধ বাতাস কিনে তা ব্যবহার করে।
সুতরাং পানি ও বায়ুবাহিত রোগের মধ্যে উপরের সাদৃশ্য বা মিল এবং অসাদৃশ্য বা অমিল রয়েছে।
প্রশ্ন : হাঁচি-কাশির সময় হাত দিয়ে মুখ ঢেকে বা রুমাল ব্যবহার করে আমরা সংক্রামক রোগ প্রতিরোধ করতে পারি। এ ক্ষেত্রে হাতের তালু ব্যবহার করার চেয়ে হাতের উল্টো পিঠ বা কনুইয়ের ভাঁজ ব্যবহার করা ভালো কেন?
উত্তর : হাঁচি-কাশির সময় হাত দিয়ে মুখ ঢেকে বা রুমাল ব্যবহার করে আমরা সংক্রমামক রোগ প্রতিরোধ করতে পারি। এ ক্ষেত্রে হাতের তালু ব্যবহার করার চেয়ে হাতের উল্টো পিঠ বা কনুইয়ের ভাঁজ ব্যবহার করা ভালো। কারণ হাঁচি-কাশির মাধ্যমেও আমরা হাতের সাহায্যে রোগ ছড়াই। রোগ প্রতিরোধের সবচেয়ে ভালো উপায় হলো রোগ জীবাণু বন্ধ করা। জীবাণু ছড়ানো বন্ধ করা রোগ থেকে বাঁচার ভালো অভ্যাস। আমরা হাঁচি-কাশির সময় হাতের উল্টো পিঠ ব্যবহার করলে জীবাণু হাতের উল্টো পিঠে থাকে। কিন্তু আমরা বিভিন্ন কাজ করি হাতের তালু দেয়। ফলে হাতের উল্টো পিঠে লেগে থাকা জীবাণু আমার কাজের সংস্পর্শে আসবে না। আর এভাবেই আমরা খুব সহজে সাধারণ সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে জীবাণু ছড়ানো বন্ধের মাধ্যমে সংক্রামক রোগের হাত থেকে বাঁচতে পারি।
সুতরাং হাতের উল্টো পিঠ খুব কম ব্যবহার হয় বলে জীবাণু ছড়ানো বন্ধের একটি সহজ উপায় এটি। তাই কাজের সময় হাতের উল্টো পিঠ বা কনুই কম ব্যবহার হয় বলে হাঁচি-কাশির সময় সংক্রামক রোগের হাত থেকে বাঁচার জন্য এটি ব্যবহার করা ভালো।
মহাবিশ্ব
প্রশ্ন : সূর্যকে পূর্ব থেকে পশ্চিম আকাশে চলমান মনে হয় কেন? ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : পৃথিবী প্রতি ২৪ ঘণ্টায় নিজ অক্ষে একবার সম্পূর্ণ ঘুরছে। আর এ কারণে প্রতিদিন সকালে সূর্য উঠে এবং সন্ধ্যায় আস্ত যায়। পৃথিবীর একদিক সূর্যের দিকে মুখ করে থাকে এবং অপরদিক সূর্যের বিপরীতে থাকে। যে দিকটা সূর্যের দিকে মুখ করে থাকে সেই দিকটায় দিন এবং যে দিকটা বিপরীত দিকে থাকে সেই দিকটায় রাত হয়।
প্রতিদিনের সূর্যকে দেখে মনে হয় যে, এটি সকালে পূর্ব দিকে উঠে এবং দিনের শেষে পশ্চিম দিকে অস্ত যায়। পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে নিজ অক্ষের উপর পৃথিবীর ঘূর্ণনের কারণেই এমনটি হয়। পৃথিবীর এই ঘূর্ণনের কারণে সূর্য পূর্ব দিক থেকে পশ্চিম দিকে তার অবস্থান পরিবর্তন করছে বলে মনে হয়।
সুতরাং, পৃথিবীর আপন কক্ষে পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে ঘুরছে বা আবর্তন করছে বলে সূর্যকে পূর্ব থেকে পশ্চিম আকাশে চলমান মনে হয়।
প্রশ্ন : পৃথিবীর অর্ধেক উত্তরাংশ সূর্যের দিকে হেলে পড়লে সূর্যের উচ্চতার কী ঘটে? তখন দিন ও রাতের দৈর্ঘ্যরে কী পরিবর্তন ঘটে?
উত্তর : পৃথিবীর অর্ধেক উত্তরাংশ সূর্যের দিকে হেলে পড়লে সূর্যের উচ্চতা, দিন ও রাতের দৈর্ঘ্যরে নিচের পরিবর্তন ঘটে।
উচ্চতা : * তখন উত্তরাংশে গ্রীষ্মকাল আর দক্ষিণ অংশে শীতকাল বিরাজ করে। তাই উত্তরাংশে সূর্য আকাশের অপেক্ষাকৃত উঁচুতে অবস্থান করে।
* দক্ষিণাংশে তখন শীতকাল হওয়ায় সূর্য আকাশের অপেক্ষাকৃত নিচে অবস্থান করে।
দিনের দৈর্ঘ্য : * এ সময় উত্তরাংশে সূর্য খাড়াভাবে কিরণ দেয়। ফলে দিনের সময়কাল দীর্ঘ হয় এবং তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়।
* এ সময় দক্ষিণাংশে সূর্য তির্যকভাবে কিরণ দেয়। ফলে দিনের সময়কাল কম হয়।
রাতের দৈর্ঘ্য : * উত্তরাংশে এ সময় গ্রীষ্মকাল থাকায় রাতের দৈর্ঘ্য কম হয়।
* দক্ষিণাংশে শীতকাল হওয়ায় রাতের দৈর্ঘ্য দিনের চেয়ে বেশি হয়।
সুতরাং, পৃথিবীর অর্ধেক উত্তরাংশে সূর্যের দিকে হেলে পড়লে সূর্যের উচ্চতা, দিন ও রাতের দৈর্ঘ্যরে উভয় গোলার্ধে বিপরীত অবস্থা বিরাজ করে।
প্রশ্ন : কীভাবে সৌরজগৎ, মিল্কওয়ে গ্যালাক্সি ও মহাবিশ্ব সম্পর্কযুক্ত?
উত্তর : সৌরজগৎ : সূর্য এবং তার চারদিকে ঘূর্ণায়মান গ্রহ, উপগ্রহ, গ্রহাণু, ধূমকেতু, ধূলিকণা ও গ্যাস নিয়ে সৌরজগৎ গঠিত।
গ্যালাক্সি : সূর্য এবং গ্রহগুলো সৌরজগতের অংশ। আবার সৌরজগৎ গ্যালাক্সির অন্তর্ভুক্ত। গ্যালাক্সি হচ্ছে নক্ষত্রের একটি বিশাল সমাবেশ। আমাদের সৌরজগৎ মিল্কিওয়ে নামক গ্যালাক্সির অন্তর্গত। মিল্কিওয়ে দেখতে সর্পিলাকার।
মহাবিশ্ব : গ্যালাক্সি, নক্ষত্র, গ্রহ, মহাশূন্য, সব পদার্থ এবং শক্তি এই সবকিছু নিয়েই গঠিত হয়েছে মহাবিশ্ব।
সম্পর্ক : * সৌরজগতের ৩য় গ্রহ হলো পৃথিবী। আর পৃথিবীর একমাত্র উপগ্রহ হলো চাঁদ। পৃথিবী থেকে চাঁদের দূরত্ব ৩,৮৪,৪০০ কিমি.। আলো প্রতি সেকেন্ডে ৩,০০,০০০ কিমি. বেগে চলে। আর তাই চাঁদের আলো ১.৩ সেকেন্ডে পৃথিবীতে পৌঁছায়।
* পৃথিবী থেকে সূর্যের দূরত্ব প্রায় ১৫,০০,০০,০০০ কিমি. সূর্য থেকে পৃথিবীতে সূর্যের আলো পৌঁছে ৮ মিনিট পর।
* আমরা যদি আলোর গতিতে চলতে পারতাম তবে মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে যেতে আমাদের ১,৩০,০০০ বছর সময় লাগত। স্যার এডিংটনের মতে, প্রতি গ্যালাক্সিতে গড়ে দশ সহস্র কোটি নক্ষত্র রয়েছে।
* কোটি কোটি গ্যালাক্সি নিয়ে মহাবিশ্ব গঠিত। এর আকার কেউ জানে না। দিন দিন মহাবিশ্ব বড় হচ্ছে। মহাকাশ সম্পর্কিত গবেষণাকে বলা হয় জ্যোতির্বিজ্ঞান। বিজ্ঞানী গ্যালিলিও উন্নত দূরবীক্ষণ যন্ত্র ব্যবহার করে প্রমাণ করেছেন যে, সৌরজগতের গ্রহগুলো সৌরজগতকে কেন্দ্র করে ঘুরছে।
* মহাকাশ পর্যবেক্ষণের জন্য বর্তমানে বিজ্ঞানীরা মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্র স্থাপন করেছেন এবং মহাকাশ দূরবীক্ষণ যন্ত্র ব্যবহার করছেন।